কাটা-ছেঁড়া ছাড়াই থাইরয়েড নডিউল বা টিউমারের আধুনিক ও নিরাপদ চিকিৎসা — এখন বাংলাদেশেই পাওয়া যাচ্ছে!
ডা. এম কে আজাদ
কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান
সরকারী কর্মচারি হাসপাতাল, ফুলবাড়িয়া, ঢাকা।





“RFA পদ্ধতিতে সূঁচের মাধ্যমে নিরাপদে থাইরয়েড নডিউল অপসারণ করা হয়।”
থাইরয়েড গ্রন্থি, যা আমাদের শরীরে একটি ছোট প্রজাপতি আকৃতির অঙ্গ, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ, শরীরের তাপমাত্রা এবং খাবার থেকে শক্তি উৎপাদনের (বিপাকক্রিয়া) নিয়ন্ত্রণ করে। তবে অনেক সময় থাইরয়েড গ্রন্থিতে নডিউল বা টিউমার তৈরি হতে পারে, যা একদিকে যেমন সমস্যা তৈরি করে, তেমনি অন্যদিকে অবহেলা করা হলে গুরুতর শারীরিক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। থাইরয়েড নডিউল বা টিউমার হলো থাইরয়েডের মধ্যে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি।
থাইরয়েডের নডিউল বা টিউমার কি সমস্যা করতে পারে:
এই থাইরয়েড নডিউলগুলি বেশিরভাগ সময় নিরীহ হলেও, কিছু নডিউল বড় হয়ে গলা ফুলে যাওয়া, কথা বলতে কষ্ট, শ্বাস নিতে সমস্যা বা গিলতে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া প্রায় ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে থাইরয়েড নডিউল ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। বাংলাদেশে আয়োডিনের ঘাটতি থাকায় এই রূপান্তরের ঝুঁকি আরও বেশি। এ অবস্থায়, সময়মতো চিকিৎসা না নিলে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি ও সীমাবদ্ধতা:
অধিকাংশ ক্ষেত্রে, থাইরয়েড নডিউল বা টিউমারের জন্য চিকিৎসার প্রচলিত পদ্ধতি ছিল সার্জারি বা অপারেশন। যদিও এটি থাইরয়েড নডিউল বা টিউমারকে সরিয়ে ফেলে, কিন্তু সার্জারি প্রক্রিয়াতে গলায় বড় দাগ পড়ে, দীর্ঘ সময় হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয় এবং সম্পুর্ণ অ্যানেসথেসিয়া গ্রহণ করতে হয়। একাধিক ক্ষেত্রে রোগীকে সার্জারির পরও আজীবন থাইরয়েড হরমোনের ওষুধ খেতে হতো। কারও কারও আজিবন স্বড় পরিবর্তন ও ক্যালসিয়ামের ভারসম্য নস্ট হয়ে দৈনিক ৬-৭ টি ক্যালসিয়াম ক্ষেতে হয়
আধুনিক সমাধান: রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন (RFA):
বর্তমানে, থাইরয়েড নডিউল বা টিউমারের চিকিৎসায় আরেকটি অত্যন্ত কার্যকর এবং আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার হচ্ছে—রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন (RFA)। এটি একটি ইনোভেটিভ এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট অস্বাভাবিক টিস্যু ধ্বংস করা হয়, পুরো থাইরয়েড গ্রন্থি কেটে ফেলা হয় না। আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে নডিউলের সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করে, সূঁচের মাধ্যমে তাপ শক্তি প্রয়োগ করা হয়, যা নডিউলকে ধ্বংস করে।
RFA পদ্ধতির সুবিধাসমূহ:
- শুধুমাত্র একদিনে চিকিৎসা: এই চিকিৎসা প্রক্রিয়া প্রায় ৩০-৪০ মিনিট সময় নেয় এবং বহিঃবিভাগেই করা সম্ভব
- কোনো দাগ থাকে না: সার্জারির পর গলায় যে দাগ থাকে, তা এ ক্ষেত্রে থাকে না, যা রোগীকে একাধিক সামাজিক এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়।
- দ্রুত সুস্থতা: RFA পদ্ধতিতে রোগী খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে এবং বেশিরভাগ রোগীকে বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না।
- আজীবন ওষুধ খেতে হয় না: এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে সার্জারির পরবর্তি আজীবন হরমোনের ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন হয় না।
- কম ঝুঁকি ও কম ব্যথা: RFA পদ্ধতি ব্যথাহীন এবং ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম, যা রোগীদের জন্য একটি বিশাল সুবিধা।
6.কার্য়করএবংনিরাপদ পদ্ধতি: গবেষণায় দেখা গেছে যে, RFA করার পর নডিউলের আকার ৪ বছরে ৯৩% পর্যন্ত ছোট হয়ে যায়। যারা অতিরিক্ত হরমোন উৎপাদনকারী নডিউলে ভুগছিলেন, তাদের ক্ষেত্রে ৬ মাসের মধ্যে ৫৩–৭১% আকার কমে এবং ৮২% রোগীর রক্তের হরমোন মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যায়। বিশেষত এশীয় জনগণের মধ্যে এই ফলাফল অত্যন্ত সন্তোষজনক।
কেন RFA-ই সেরা পছন্দ?
RFA পদ্ধতির মূল আকর্ষণ হল, এটি থাইরয়েড গ্রন্থিকে অক্ষত রেখে নডিউলের সমস্যা সমাধান করে অর্থাৎ ন্যূনতম হস্তক্ষেপমূলক (মিনিমালি ইনভেসিভ) এবং কম ঝুঁকি, ও কম কষ্টের মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার সুযোগ দেয়। আর, এটি একটি আধুনিক পদ্ধতি হওয়ায় অন্যান্য প্রচলিত চিকিৎসার তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর ও নিরাপদ।
ডাক্তারদের পরামর্শ:
থাইরয়েড নডিউল বা টিউমার থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। RFA পদ্ধতি যদি সময়মতো শুরু করা হয়, তবে কোনো ধরনের অপারেশন ছাড়াই রোগী সুস্থ থাকতে পারেন।
কোথায় পাবেন এই চিকিৎসা?
ডা. এম কে আজাদ দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ববিখ্যাত আসান মেডিকেল সেন্টারের খ্যাতনামা অধ্যাপক জে এইচ বেক-এর অধীনে রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন (RFA) পদ্ধতির উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে তিনি একমাত্র বাংলাদেশি চিকিৎসক হিসেবে ইসলামী ব্যাংক কার্ডিয়াক সেন্টার, মিরপুর-১১,ঢাকায় এই অত্যাধুনিক ও অস্ত্রোপচারবিহীন থাইরয়েড চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন।
- থাইরয়েড নডিউল মানেই সব সময় অপারেশন নয়।
- আধুনিক RFA পদ্ধতিতে নিরাপদে ও দ্রুত চিকিৎসা সম্ভব।
- নিজের ও পরিবার-পরিজনের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।
এটি একটি আশাব্যঞ্জক এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি, যা রোগীকে নতুন করে জীবন দান করতে সক্ষম। RFA পদ্ধতিতে থাইরয়েড নডিউলের চিকিৎসা কখনোই জটিল বা বিপদজনক নয়।